বিজ্ঞানের জনক কে – The father of Science

বিজ্ঞানের জনক কে – The father of Science : নমস্কার, প্ৰিয় পাঠক বন্ধুরা, সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বহু বিখ্যাত জ্ঞানী মনীষী জন্ম গ্রহণ করেছেন এবং তারা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের মহান সৃষ্টি বা আবিষ্কার এর জন্য আজও আমরা তাঁদেরকে স্মরণ করি। সেইসব জ্ঞানী মনীষীদের অমর সৃষ্টি ও কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন জিনিসের “সৃষ্টিকর্তা বা জনক” হিসাবে জানি। তেমনি একজন মহান মনীষীকে নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো, যাকে “বিজ্ঞানের জনক” নামে ডাকা হয়। তাহলে আসুন জেনে নিই — বিজ্ঞানের জনক কে – The father of Science.

বিজ্ঞান (Science) সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, প্রাকৃতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমাদের নির্দেশিকা প্রদান করে। বিজ্ঞান আমাদের চারপাশের ঘটনার পিছনে কী রয়েছে তা বোঝার ভিত্তি সরবরাহ করে। এটি আমাদের অনেক বিষয়ে তথ্য প্রদান করে, রোগের চিকিৎসা থেকে শুরু করে মহাকাশের অগণিত রহস্য উদঘাটন করা পর্যন্ত। তাই সাধারণত সবার মনেই প্রশ্ন জাগে “বিজ্ঞানের জনক কে – The father of Science?

বিজ্ঞান কাকে বলে – Definition of Science in Bengali

বিজ্ঞান” কথার অর্থ হল — বিশেষ জ্ঞান। বিজ্ঞান কথার ইংরেজি হল Science যা ল্যাটিন ভাষার সাইন্সশিয়া (Scientia) শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হল — জানা বা জ্ঞান। বিজ্ঞান (Science) হল সেই পদ্ধতিগত জ্ঞান বা শিক্ষা যা চিন্তা, পর্যবেক্ষণ, অধ্যয়ন এবং পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত হয়, যা যে কোনও অধ্যয়নের বিষয়ের প্রকৃতি বা নীতিগুলি জানার জন্য করা হয়। বিজ্ঞান শব্দটি জ্ঞানের একটি শাখার জন্যও ব্যবহৃত হয় যা পরীক্ষা এবং অনুমানের মাধ্যমে তথ্য, নীতি এবং পদ্ধতিগুলিকে প্রতিষ্ঠা ও সংগঠিত করে।

বিজ্ঞানের সংজ্ঞা — ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক মহাবিশ্ব এবং এতে সংঘটিত জিনিস সম্পর্কে জ্ঞানের পদ্ধতিকে বিজ্ঞান বলে। এটি একটি বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ যা প্রকৃতির মৌলিক নিয়ম ব্যাখ্যা করে। 

সহজ ভাষা — অনুশীলনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যকে বিজ্ঞান বলে।

বিজ্ঞান আমাদের কেবল ধারণাগুলি বুঝতে সাহায্য করে না বরং আমাদের নতুন সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তিগত পণ্যগুলি বিকাশে সহায়তা করে, যা আধুনিক জীবনকে সহজতর করে।

বিজ্ঞানের জনক কে – The father of Science

বিজ্ঞানের জনক কে

বিজ্ঞানের জনক বলা হয় — গ্যালিলিও গ্যালিলি (Galileo Galilei) কে। গ্যালিলিও ছিলেন একজন শিক্ষক, দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ এবং পদার্থবিদ। বিজ্ঞানের উন্নয়নে তাঁর অতুলনীয় অবদান ছিল, তাই আজও তিনি তাঁর অবদানের জন্য পরিচিত।

গ্যালিলিওর পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কারণে তাকে “আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার জনক“, “আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক” এবং “বিজ্ঞানের জনক” বলা হয়। গ্যালিলিওর দ্বারা করা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলি বিজ্ঞানের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং তাই তাঁকে বিজ্ঞানের জনক (The father of Science) বলা হয়।

আরো পড়ুন: আমলাতন্ত্রের জনক কে – The father of Bureaucracy

বিজ্ঞানের কয়টি শাখা ও কি কি?

বিজ্ঞানের 4টি প্রাথমিক বিভাগ রয়েছে, আবার প্রতিটি শাখাকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করা হয়েছে যাতে অধ্যয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত থাকে। বিজ্ঞানের 4টি প্রাথমিক বিভাগ হল —

  • প্রাকৃতিক বিজ্ঞান (Natural Science),
  • সামাজিক বিজ্ঞান (Social Science),
  • প্রযুক্তি বিজ্ঞান (Technological Sciences),
  • পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental Sciences)।

প্রাকৃতিক বিজ্ঞান (Natural Science) এর শাখা সমূহ —

  • পদার্থবিদ্যা (Physics) — শক্তি, গতি, শব্দ, তাপ, বিদ্যুৎ ইত্যাদির বিজ্ঞানের অধ্যয়ন।
  • রসায়ন (Chemistry) — রাসায়নিক প্রক্রিয়া, উপাদান, যৌগ, পদার্থ ইত্যাদির অধ্যয়ন।
  • জীববিজ্ঞান (Life Science) — জীবিত প্রাণীর গঠন, কার্য, গবেষণা, জীবন প্রক্রিয়া ইত্যাদির অধ্যয়ন।
  • খনিজবিদ্যা (Geology) — পৃথিবীর গভীরে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়া, ধাতু, পাথর ইত্যাদির অধ্যয়ন।

সামাজিক বিজ্ঞান (Social Science) এর শাখা সমূহ —

  • মনোবিজ্ঞান (Psychology) — মানুষের মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, আচরণ এবং আবেগের অধ্যয়ন।
  • সমাজবিজ্ঞান (Sociology) — সমাজের কাঠামো, সংগঠন, সামাজিক প্রক্রিয়া ইত্যাদির অধ্যয়ন।
  • অর্থনীতি (Economy) — অর্থনীতি এবং উন্নয়ন, আর্থিক নীতি, শিল্প কার্যক্রম ইত্যাদির অধ্যয়ন।
  • ইতিহাস (History) — মানব সমাজের ইতিহাস, ঘটনা এবং সংস্কৃতির অধ্যয়ন।

প্রযুক্তি বিজ্ঞান (Technological Sciences) এর শাখা সমূহ —

  • তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) — কম্পিউটার, সফ্টওয়্যার, নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি বিজ্ঞানের অধ্যয়ন।
  • উপাদান বিজ্ঞান (Material Science) — ডিজাইন করা উপকরণ, ডিভাইস এবং পণ্যগুলির বিকাশ প্রক্রিয়ার অধ্যয়ন।
  • নিউরোসায়েন্স (Neuroscience) — নিউরন, ফ্রেনোলজি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার অধ্যয়ন।

পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental Sciences) এর শাখা সমূহ —

  • জলবায়ু বিজ্ঞান (Climate Science) — জলবায়ু পরিবর্তন, মেঘ এবং আবহাওয়া প্রক্রিয়া ইত্যাদির অধ্যয়ন।
  • উদ্ভিদবিদ্যা এবং জীববৈচিত্র্য (Botany and Biodiversity) — উদ্ভিদ, উদ্ভিদ জীবন এবং জীববৈচিত্র্যের অধ্যয়ন।
  • ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স (Climate and Environmental Science) — পরিবেশ দূষণের অধ্যয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।

Note : এই উপ-শাখাগুলিতেও বিভিন্ন উপ-উপ-শাখা রয়েছে, যা নির্দিষ্ট বিষয় এবং ক্ষেত্রগুলির অধ্যয়নকে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করে।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জনক এর নাম 

  • ভারতীয় উদ্ভিদ শারীরবৃত্তির জনক — কে.এ. চৌধুরী (K.A. Chaudhary)।
  • বাস্তুশাস্ত্রের জনক — Reiter.
  • ইকোসিস্টেম ইকোলজির জনক — ই.পি. ওদম (E. P. Odom)।
  • ভারতীয় বাস্তুশাস্ত্রের জনক — রামদেব মিশ্র (Ramdev Mishra)।
  • জীবাশ্মবিদ্যার জনক — লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (Leonardo da Vinci)।
  •  উদ্ভিদ জীবাশ্মবিদ্যার জনক — সেওয়ার্ড (Seward)।
  • আধুনিক ব্যাকটেরিওলজির জনক — রবার্ট কোচ (Robert Koch)।
  • আধুনিক মাইক্রোবায়োলজির জনক — S.A. Woxmann.
  • মাইক্রোস্কোপিক অ্যানাটমির জনক — মার্সেলো মালপিঘি (Marcello Malpighi)।
  • প্রাকৃতিক ইতিহাসের জনক — গ্যালন (Galen)।
  • মানব দেহতত্ত্বের জনক — আন্দ্রে ভ্যাসেলিয়াস (Andre Vesalius)।
  • উদ্ভিদ শারীরবৃত্তির জনক — এন. গ্রয়ু (N. Greu)।
  • জৈব রাসায়নিক জেনেটিক্সের জনক — K. E. Garrod.
  • বহুগামী উত্তরাধিকারের জনক — Kolreuter
  • ইউনিজেনিক উত্তরাধিকারের জনক — গ্রেগর মেন্ডেল (Gregor Mendel)
  • পুনরুজ্জীবনের জনক — আব্রাহাম ট্রম্বলে (Abraham Trembley)
  • জেরোন্টোলজির জনক — ভ্লাদিমির-কোরেন্টস্কি (Vladimir Korentsky)
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক — পল ভের্জ (Paul Verg)
  • এনজিওলজির জনক — উইলিয়াম হার্ভে (William Harvey)
  • মাইক্রোবায়োলজির জনক — লুই পাস্তুর (Louis Pasteur)
  • ব্যাকটেরিওলজির জনক — লিউয়েনহোক (Leuwenhoek)
  • আধুনিক ভ্রূণবিদ্যার জনক — ভন বেয়ার (Von Baer)
  • চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক — হিপোক্রেটস (Hippocrates)
  • অস্ত্রোপচারের জনক — সুশ্রুত (Sushruta)
  • আয়ুর্বেদের জনক — চরক (Charak)
  • প্যাথলজির জনক — রুডলফ ভীরচও (Rufolf Virchow)
  • টিকাদানের জনক — এডওয়ার্ড জেনার (Edward Jenar)
  • ব্লাড গ্রুপিং এর জনক — কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার (Karl Landsteiner)
  • বিকিরণ বিজ্ঞানের জনক — Roentgen
  • মানুষের জেনেটিক্সের জনক — K. E. Garrod
  • পরীক্ষামূলক জেনেটিক্সের জনক — মরগান (J J Morgan)
  • জীববিজ্ঞানের জনক — এরিস্টটল (Aristotle)
  • উদ্ভিদবিদ্যার জনক — থিওফ্রাস্টাস (Theophrastus)
  • প্রাণিবিদ্যার জনক — এরিস্টটল (Aristotle)
  • শ্রেণীবিন্যাসের জনক — এরিস্টটল (Aristotle)
  • আধুনিক বিজ্ঞানের জনক — কার্ল লিনিয়াস (Carl Linnaeus)
  • জেনেটিক্সের জনক — গ্রেগর মেন্ডেল (Gregor Mendel)
  • আধুনিক জেনেটিক্সের জনক — ব্যাসন (Bateson)
  • ভ্রূণবিদ্যার জনক — এরিস্টটল (Aristotle) 

আরো পড়ুন: ভূগোলের জনক কে – The father of Geography

FAQs

ভারতীয় বিজ্ঞানের জনক কাকে বলা হয়?

ভারতীয় বিজ্ঞানের জনক বলা হয় — আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোসকে।

প্রাচীন বিজ্ঞানের জনক কাকে বলা হয়?

থ্যালেসকে প্রাচীন বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

বিজ্ঞানের জনক কে?

গ্যালিলিও গ্যালিলি।

প্রথম বিজ্ঞান কি?

এটা বিশ্বাস করা হয় যে জ্যোতির্বিদ্যা ছিল পৃথিবীর সর্বত্র আবির্ভূত প্রথম বিজ্ঞান।

ভারতে জীববিজ্ঞানের জনক কে?

ভারতে আধুনিক জীববিজ্ঞানের জনক হলেন ডঃ পুষ্পমিত্র ভার্গব।

গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের অপর নাম কি?

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, হোম আর্টস, হোম সায়েন্স, হোম ইকোনমিক্স এবং হোম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামে পরিচিত।

উপসংহার

পাঠক বন্ধুরা, ধৈর্য সহকারে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য সাধুবাদ জানাচ্ছি। আশাকরি আপনার কাঙ্খিত অনুসন্ধান অনুযায়ী (বিজ্ঞানের জনক কে – The father of Science) আমাদের পোস্টের মাধ্যমে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন। আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আমাদের পোস্টটি এখানেই শেষ করছি। আমাদের পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই শেয়ার বাটন এ ক্লিক করে আপনাদের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন। সকলকে ধন্যবাদ।

Leave a Comment