বাংলা গদ্যের জনক কে – The Father of Bengali Prose

বাংলা গদ্যের জনক কে – The Father of Bengali Prose : নমস্কার, প্ৰিয় পাঠক বন্ধুরা, সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বহু বিখ্যাত জ্ঞানী মনীষী জন্ম গ্রহণ করেছেন এবং তারা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের মহান সৃষ্টি বা আবিষ্কার এর জন্য আজও আমরা তাঁদেরকে স্মরণ করি। সেইসব জ্ঞানী মনীষীদের অমর সৃষ্টি ও কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন জিনিসের “সৃষ্টিকর্তা বা জনক” হিসাবে জানি ডাকা হয়। তেমনি একজন মহান মনীষীকে নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো, যাকে “বাংলা গদ্যের জনক” নামে ডাকা হয়। তাহলে আসুন জেনে নিই — বাংলা গদ্যের জনক কে – The Father of Bengali Prose.

বাংলা গদ্যের জনক কে – The Father of Bengali Prose

বাংলা গদ্যের জনক কে

বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় – বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক গদ্যকার “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)” কে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ঊনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার, লেখক,দার্শনিক, পণ্ডিত, অনুবাদক, প্রকাশক, মানবহিতৈষী, অধ্যক্ষ ছিলেন। বাঙালি সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে “বাংলা গদ্যের জনক” বলা হলেও তত্ত্বগত ভাবে তিনি কিন্তু বাংলা গদ্যের জনক নন। কারণ বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় তার আগমনের বহুপূর্বেই গদ্যরচনার সূত্রপাত ঘটেছিল। কিন্তু সেইসব গদ্য ছিল শিল্পগুণবিবর্জিত নীরস এবং অনেক ক্ষেত্রেই অসংলগ্ন বাক্যসমষ্টি। যথাযথভাবে ব্যাকরণ অনুসরণ করা হতো না এবং বিরামচিহ্ন ব্যবহার করা হতো না।   

বিদ্যাসাগর সর্বপ্রথম বাংলা সাধু গদ্যের একটি মান্য ধ্রুবক নির্দেশনা করেন। প্রয়োজনবোধে সেই গদ্যে চলিত ভাষার গতিশীলতাও যুক্ত করেন এবং বাংলা সাধু গদ্যরীতিকে পূর্ণাঙ্গ রুপ দান করেছেন তিনি। বাংলা গদ্য ভাষার বিকাশেও তার অবদান অনেক। তার কল্পনা ও স্বকীয় পাণ্ডিত্যের সংমিশ্রণে যে গদ্যভাষার জন্ম তিনি দেন, তা ছিল সরস, সুমধুর, সুশ্রাব্য, ছন্দোময় ও গতিশীল। এই অর্থে তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের নব জন্মদাতা। তিনি সাধু ভাষায় বাংলা গদ্যরীতিকে পূর্ণাঙ্গতা দান করেন তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে “বাংলা গদ‍্যের জনক” বলা হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর জীবনী – Biography of Iswar Chandra Bidyasagar in Bengali

ঈশ্বরচন্দ্র চন্দ্র বিদ্যাসাগর 19 শতকের ‘বাংলার রেনেসাঁ’ আন্দোলনের একজন মহান নেতা ছিলেন। 1800 সালে তার জীবনের শুরু থেকে তার শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সমাজ সংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শুধু একজন সমাজ সংস্কারকই ছিলেন না, একজন বিখ্যাত লেখকও ছিলেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 1820 সালের 26 শে সেপ্টেম্বর বাংলার মেদিনীপুর জেলার একটি ছোট গ্রাম বীরসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ভগবতী দেবী। বিদ্যাসাগর ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। গ্রামে থাকতেই তিনি সংস্কৃত ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

এরপর ১৮২৬ সালে বাবার সঙ্গে কলকাতায় এসে পড়াশুনা শুরু করেন। পরিবারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে, ঈশ্বরচন্দ্র স্কুলের পরে গৃহস্থালির কাজে সাহায্য করতেন। কথিত আছে, সম্পদের অভাবে তিনি রাতের বেলা রাস্তার আলোর নিচে পড়াশুনা করতেন।

শৈশব থেকেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিভা প্রকাশ পায়। তিনি তার সমস্ত পরীক্ষা সফলভাবে পাস করেছেন। 1829 থেকে 1841 সাল পর্যন্ত তিনি সংস্কৃত কলেজে বেদান্ত, ব্যাকরণ ও সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। এ সময় তিনি নিয়মিত বৃত্তিও পান। পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র পড়াশোনার পাশাপাশি জোড়াসাঁকোর একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করতেন।

আরো পড়ুন: প্লাস্টার অফ প্যারিস বলা হয় কাকে? – Definition of Plaster of Paris

1839 সালে, তিনি সংস্কৃত বিষয়ে একটি জ্ঞান পরীক্ষা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এই প্রতিযোগিতাতেই তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ অর্থাৎ “জ্ঞানের সাগর” উপাধি পেয়েছিলেন। আইন পরীক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। প্রথম জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দক্ষ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, তার চ্যালেঞ্জিং জীবন তার ভবিষ্যতের জন্য পটভূমি তৈরি করে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 1841 সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে মাত্র 21 বছর বয়সে সংস্কৃত বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। তাঁর প্রতিভার কারণে তিনি শীঘ্রই হিন্দি এবং ইংরেজি শিখেছিলেন। এরপর 1946 সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ত্যাগ করেন এবং সংস্কৃত কলেজে ‘সহকারী সচিব’ পদে কাজ করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন মুক্তমনা ব্যক্তি ছিলেন।

1851 সালে, তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষও হন। 1855 সালে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিশেষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন এবং শিক্ষার মানের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেন। শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য ঐতিহ্যগত ভারতীয় জ্ঞান এবং সমসাময়িক উভয় বিষয়েই জোর দেওয়া হয়েছিল।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে প্রচলিত মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করে একটি নতুন ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার অস্তিত্ব আনতে কাজ করেছিলেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি সংস্কৃত কলেজ ছেড়েছিলেন, কিন্তু ফিরে এসে তিনি সংস্কৃত ছাড়াও ইংরেজি এবং হিন্দি পড়ান। বাংলা শেখার ওপর জোর দেওয়া হয়। অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বৈদিক গ্রন্থের পাশাপাশি ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলি শিক্ষার উপর জোর দিয়েছিলেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজে নারীদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে তা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছিলেন। এ কারণে তিনি নৃশংসতার বিরুদ্ধে জোরালোভাবে কথা বলতে পিছপা হননি। ঈশ্বরচন্দ্রের মা ছিলেন একজন ধার্মিক মহিলা। তার মা একবার তাকে হিন্দু বিধবাদের বেদনা ও অসহায়ত্বের অবসান ঘটাতে বলেছিলেন কারণ তখন বিধবাদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ।

তিনি যখন সমাজে বিধবা নারীদের অবস্থান মজবুত করার জন্য আওয়াজ তোলেন তখন অনেক রক্ষণশীল মানুষ তার বিরোধিতা শুরু করেন। ব্রাহ্মণ্যবাদী কর্মকর্তারাও তার বিরোধিতা করেন। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র হাল ছাড়েননি এবং প্রমাণ করেছেন যে বিধবা পুনর্বিবাহ বৈদিক শাস্ত্র দ্বারা অনুমোদিত। 1856 সালের 26 জুলাই হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন, 1856 বা আইন XV পাশ হয় এবং বিধবা নারীরাও তাদের অধিকার পায়।

এ ছাড়া তিনি নরম মনের মানুষও ছিলেন। তিনি তার সহকর্মী এবং বন্ধুদের সাহায্য করতে পিছপা হননি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার বেতনের অধিকাংশই দরিদ্র ছাত্রদের পড়ালেখা এবং কিশোরী বিধবাদের সাহায্যে ব্যয় করতেন। তিনি তাঁর সমগ্র জীবন শিক্ষা ও বিধবাদের অবস্থার উন্নয়নে উৎসর্গ করেছিলেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও শ্রদ্ধেয় বাঙালি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে স্থানান্তর এবং ভারতে প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করেছিলেন। মাইকেল মধুসূদন তাঁর নিঃস্বার্থ পরোপকারের জন্য তাঁকে ‘দয়ার সাগর’ (উদারতার মহাসাগর) উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি একজন অসাধারণ চরিত্রের মানুষ ছিলেন, যিনি নিজের আত্মসম্মানে কোনো আঘাত সহ্য করেননি।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ভারতের মহান পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, সংস্কারক এবং বাঙালি নবজাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী, 1891 সালের 29 শে জুলাই ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘এটা আশ্চর্যের বিষয় যে কীভাবে? চল্লিশ কোটি বাঙালি সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় ঈশ্বর কি একজন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থাবলি কি কি

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। চলুন জেনে নেই — ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থাবলির নাম।

শিক্ষামূলক গ্রন্থ

  • বর্ণপরিচয় (1ম, 2য় ভাগ),
  • ঋজুপাঠ (1ম, 2য়, 3য় ভাগ),
  • সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা,
  • ব্যাকরণ কৌমুদী,
  • শব্দমঞ্জুরী (অভিধানমূলক গ্রন্থ),
  • বোধোদয়,

মৌলিক গ্রন্থ

  • সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব,
  • বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা,
  • বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা (প্রথম খন্ড, ২য় খন্ড),
  • অতি অল্প হইল,
  • আবার অতি অল্প হইল,
  • ব্রজবিলাস,
  • রত্নপরীক্ষা,
  • প্রভাবতী সম্ভাষণ,
  • জীবন-চরিত,
  • নিষ্কৃতি লাভের প্রয়াস,
  • ভূগোল খগোল বর্ণনম্,

আরো পড়ুন: ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রীকে কি বলা হয় – British Finance Minister is called

ইংরেজি গ্রন্থ

  • পোয়েটিক্যাল সিলেকশনস্
  • সিলেকশনস্ ফ্রম গোল্ডস্মিথ
  • সিলেকশনস্ ফ্রম ইংলিশ লিটারেচার

অনুবাদ গ্রন্থ

  • সংস্কৃত থেকে বাংলা
  • শকুন্তলা (কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ অবলম্বনে),
  • সীতার বনবাস (ভবভূতির উত্তররামচরিতম্‌ নাটকের আখ্যানবস্তু),
  • মহাভারতের উপক্রমণিকা (ব্যাসদেব মূল মহাভারত-এর উপক্রমণিকা অংশ অবলম্বনে)
  • বামনাখ্যানম্ (মধুসূদন তর্কপঞ্চানন রচিত ১১৭টি শ্লোকের অনুবাদ)
  • হিন্দি থেকে বাংলা
  • বেতাল পঞ্চবিংশতি (লল্লুলাল কৃত বেতাল পচ্চীসী অবলম্বনে)

সম্পাদিত গ্রন্থ

  • উত্তরচরিতম্,
  • অভিজ্ঞানশকুন্তলম্,
  • হর্ষচরিতম্,
  • পদ্যসংগ্রহ প্রথম ভাগ (কৃত্তিবাসি রামায়ণ থেকে সংকলিত),
  • পদ্যসংগ্রহ দ্বিতীয় ভাগ (রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত অন্নদামঙ্গল থেকে সংকলিত),
  • কাদম্বরী,
  • বাল্মীকি রামায়ণ,
  • রঘুবংশম্,
  • মেঘদূতম্,
  • অন্নদামঙ্গল,
  • কিরাতার্জ্জুনীয়ম্,
  • সর্বদর্শনসংগ্রহ,
  • শিশুপালবধ,
  • কুমারসম্ভবম্,

বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় কেন? অথবা বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন সংস্কৃত ভাষার অন্যতম পন্ডিত আর সংস্কৃত কাব্যসাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অসামান্য দখল ছিল। তিনি আবার নিজের চেষ্টায় ইংরেজি শিখে সেই ভাষার সাহিত্যের সঙ্গেও সম্যক পরিচিত হয়েছিলেন তিনি। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার।

তিনি সংস্কৃত কাব্যসাহিত্যে এর শব্দ ও পদবিন্যাসের শ্রুতিমাধুর্য ও গাম্ভীর্যকেই তিনি বাংলাভলী গদ্যে স্থান দিয়েছিলেন, তার দুর্বোধ্যতা বা দুরুহতাকে বর্জন করেন। অন্যদিকে কাব্যিক ছন্দোময়তায় গদ্যকে দিয়েছিলেন এক ললিত সুডৌল রূপ। 

এই গ্রহণ-বর্জনের যে অসামান্য ক্ষমতা তার মধ্যে ছিল, তার মাধ্যমে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তক গদ্যের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহারিক গদ্য ও সমকালীন সংবাদপত্রগুলির নিকৃষ্ট গদ্যনমুনা সব থেকেই ছেঁকে নিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় সাহিত্যগুণ।

আবার তিনি ইংরেজি সাহিত্যের আদর্শে যতিচিহ্নের ব্যবহার করে বাংলা সাহিত্যে কালান্তর সূচনা করতেও পিছপা হননি। নিছক ব্যবহারিক বাংলা গদ্যকে তিনি উৎকৃষ্ট সাহিত্যিক গদ্যে বিবর্তিত করতে তার প্রয়াস ব্যর্থ হননি। 

তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই যে বলেছেন, “বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত, সুপরিচ্ছন্ন ও সুসংহত করিয়া তাহাকে সহজ গতি ও কর্মকুশলতা দান করিয়াছিলেন।” 

তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। বিদ্যাসাগর ছিলেন “বাংলা গদ্যের নব জন্মদাতা” এবং তিনি “বাংলা আধুনিক গদ‍্যের জনক“।

FAQs

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন কবে?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 1820 সালে 26 সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন।

বিদ্যাসাগর কবে মারাযান?

1891 সালের 29 জুলাই বিদ্যাসাগর পরলোক গমন করেন।

কেন ঈশ্বরচন্দ্রকে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল?

 সংস্কৃত অধ্যয়ন ও দর্শনে চমৎকার সাফল্য প্রদর্শনের জন্য তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে “বিদ্যাসাগর” উপাধি লাভ করেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় কেন?

বাংলা গদ্যকে সরল ও আধুনিকীকরণের জন্য তাঁর প্রচেষ্টার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। তিনি বাংলা বর্ণমালা এবং প্রকারকেও যুক্তিযুক্ত ও সরলীকরণ করেছিলেন, যা 1780 সালে প্রথম (কাঠের) বাংলা টাইপ ছাপানোর পর থেকে অপরিবর্তিত ছিল।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সামাজিক অবদান কী ছিল?

 ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভারতে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ এবং বিধবা পুনর্বিবাহ ও নারী শিক্ষার পক্ষে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। এই ধরনের বিষয়গুলির প্রতি তাঁর অবদানের কারণে, 1856 সালে বিধবা পুনর্বিবাহ আইন পাস করা হয়েছিল, যা বিধবাদের বিবাহকে বৈধ করে তোলে।

উপসংহার

পাঠক বন্ধুরা, ধৈর্য সহকারে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য সাধুবাদ জানাচ্ছি। আশাকরি আপনার কাঙ্খিত অনুসন্ধান অনুযায়ী (বাংলা গদ্যের জনক কে – The Father of Bengali Prose) আমাদের পোস্টের মাধ্যমে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন। আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আমাদের পোস্টটি এখানেই শেষ করছি। আমাদের পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই শেয়ার বাটন এ ক্লিক করে আপনাদের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন। সকলকে ধন্যবাদ।

Leave a Comment