বাংলার দার্জিলিং বলা হয় কোন পাহাড়কে – Darjeeling of Bangladesh : নমস্কার, প্ৰিয় পাঠক বন্ধুরা, ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি সারা বিশ্বে নতুন নতুন টুরিস্ট ডেস্টিনেশন চাক্ষুস করার জন্য লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা খরচ করে চলেছে। কিন্তু আমাদের দেশেই দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা অতুলনীয় স্থান রয়েছে যা মুষ্টিমেয় কিছু জন বাদে সকলের অজানা, তেমন একটি স্থান সম্পর্কে আমরা আপনাদের জানবো আজকের — “বাংলার দার্জিলিং বলা হয় কোন পাহাড়কে – Darjeeling of Bangladesh” আর্টিকেলে।
এছাড়াও এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন — সেখানে কিভাবে যাওয়া যায়? সেখানে গিয়ে কোথায় থাকবেন? কি কি জিনিস দেখার আছে? খাবার ব্যবস্থা কোথায় পাবেন? সেখানে গিয়ে কি কি করবেন আর কি কি করবেন না? সব কিছুই আপনাকে বিস্তারিত ভাবে বলবো। তাহলে চলুন জেনে নেই — বাংলার দার্জিলিং বলা হয় কোন পাহাড়কে – Darjeeling of Bangladesh.
বাংলার দার্জিলিং বলা হয় কোন পাহাড়কে – Darjeeling of Bangladesh
বাংলাদেশের বান্দারবন জেলার চিম্বুক পাহাড়কে, বাংলার দার্জিলিং বা বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়ে থাকে। বাংলার দার্জিলিং বলা হয় চিম্বুক পাহাড় (Chimbuk Hill) কে যা চিম্বুক হিল বা কালা পাহাড় নামেও পরিচিত। চিম্বুক পাহাড় বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাহাড় এবং বান্দরবান জেলায় অবস্থিত যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি বিখ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষনীয় স্থান। চিম্বুক পাহাড় বাংলাদেশের পাহাড়ী সৌন্দর্যের রানী এবং বাংলার “দার্জিলিং” নামে পরিচিত।
চিম্বুক পাহাড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 2500 ফুট উঁচুতে এবং এটি চট্টগ্রাম থেকে 92 কিলোমিটার এবং বান্দরবান সদর থেকে মাত্র 26 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চিম্বুক পাহাড় বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় এবং বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান। বর্ষায় পাহাড়ের পাশ দিয়ে ভেসে আসা মেঘের দিকে তাকালে মনে হয় চিম্বুক মেঘের স্বর্গ।
সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য মনমুগ্ধকর। চিম্বুক থেকে নিচের দিকে তাকালে মেঘের ওপর ভেসে যাওয়ার অনুভূতি হবে। চিম্বুকের চূড়া থেকে দেখলে শুধু পাহাড় দেখা যায়। পাহাড় এবং উপত্যকার মধ্যবর্তী এঁকে বেঁকে চলা রাস্তাটি যেন আকাশে পৌঁছে গেছে বলে মনে হবে। উঁচু নিচু পাহাড়ের বিশাল দিগন্তকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো মনে হয়। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন মেঘগুলি যেন নৌকাগুলি বেয়ে চলেছে।
এই পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের দৃশ্য যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করবে। বর্ষায়, চিম্বুক পাহাড় থেকে সাজেকের মতো শক্তিশালী মেঘ উড়তে দেখা যায়, এবং আপনি যদি ভাগ্যবান হন তবে আপনি মেঘগুলিকে ছুঁয়ে দেখতে পারেন।
চিম্বুক দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে, আপনি চিম্বুক পাহাড়ের উপর মেঘের ছায়া দেখতে পারেন। পাহাড়ের বিশাল দিগন্তকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো মনে হয়। এখানে রাস্তা ঘাট উন্নত না হলেও যাতায়াত করা জন্য আপনি ছোট ছোট গাড়ি ভাড়ায় নিতে পারেন যা বিভিন্ন স্থানীয় ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রামের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে। চিম্বুক পাহাড়ে অবস্থিত আদিবাসীদের গ্রামে যেতে পারেন এবং আদিবাসীদের জীবনধারার বৈচিত্র সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আদিবাসীদের জীবন প্রকৃতির মতোই সরল। এই অনুভূতি আপনার জীবনের একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হবে। মানুষের অভিব্যক্তিতে তাদের সরলতা আপনাকে আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য সংগ্রামের কথা ভাবতে বাধ্য করবে।
এছাড়া চিম্বুক পাহাড়ে যাওয়ার পথে মিলনছড়ি ও শোইলো প্রপাত ঝর্ণা দেখা যায়। আর নীলগিরি যেতে চাইলে চিম্বুকের অবস্থান নীলগিরি যাওয়ার পথে। চিম্বুক থেকে 20 কিমি দূরে নীলগিরি।
চিম্বুক পাহাড়ে যাবেন কিভাবে – How to go Chimbuk Hill in Bengali
চিম্বুক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে বান্দারবানে পৌঁছতে হবে, কারণ বান্দারবান থেকে চিম্বুক পাহাড় 26 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত যা আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে শহর থেকে চিম্বুক পাহাড়ে পৌঁছাতে প্রায় 1 থেকে 1.5 ঘন্টা সময় লাগবে। চিম্বুক পাহাড়ে যাবেন কিভাবে তা আপনাকে ধাপে ধাপে বলছি —
1. ঢাকা থেকে বান্দারবান
বান্দরবানে যাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। ঢাকা ও বান্দরবান জাতীয় সড়কপথের সাথে সংযুক্ত। বান্দরবান যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। সর্বোত্তম উপলব্ধ বাস পরিষেবা হল সউদিয়া, এস আলম, শ্যামলী, ইউনিক, ডলফিন ইত্যাদি। ঢাকা থেকে শহরে পৌঁছাতে প্রায় 9-10 ঘন্টা সময় লাগবে। জনপ্রতি এই বাসগুলোর ভাড়া যথাক্রমে নন-এসি 550 টাকা এবং এসি 950 টাকা। রাত 9 – 10 টায় ছাড়লে সকাল ৮টার মধ্যে বান্দরবান পৌঁছে যাবেন।
আপনি মাইক্রো বাস বা ব্যক্তিগতভাবে ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করে চিম্বুক পাহাড়ে পৌঁছাতে পারেন। আপনাকে সেনাবাহিনী বা পুলিশ ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে বান্দরবানে ট্রেন বা বিমানে যেতে পারেন।
2. চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান
চট্টগ্রামের বাড্ডারহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে পূবালী ও পূর্বাণী নামের দুটি বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই দুটি বাসের ভাড়া জনপ্রতি 220 টাকা।
3. বান্দারবন থেকে চিম্বুক পাহাড়
বান্দরবান জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ি, জীপ বা সিএনজি ভাড়া করে চিম্বুক যেতে পারেন। বান্দরবান শহর থেকে পৌঁছাতে প্রায় 1 ঘন্টা 30 মিনিট সময় লাগবে।
Note : মনে রাখতে হবে বিকাল ৪টার পর চিম্বুক-থানচি রুটে কোনো যানবাহন চলবে না। তাই চিম্বুক পাহাড়ে যেতে হলে সময়ের আগেই যেতে হবে।
আরো পড়ুন: পানিতে নৌকার বৈঠা বাঁকা দেখা যাওয়ার কারণ – The reason for the bowing of the boat in the water
চিম্বুক পাহাড়ে কোথায় থাকবেন
পাহাড়ি এলাকা ও দুর্গমতার কারণে চিম্বুকে কোনো হোটেল নেই। তবে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে একটি রেস্ট হাউস পরিচালিত হচ্ছে। তবে চিম্বুক পর্যটন থেকে আরও দূরে রয়েছে নীলগিরি বা আগের বিলাসবহুল সাইরু রিসোর্ট। বান্দরবান জেলা শহরে বিভিন্ন মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে আপনি চাইলে কম খরচে এখানে থাকতে পারেন। এসব হোটেল ও রিসোর্টে থাকতে পারবেন প্রতি রাতে 700 থেকে 3 হাজার টাকায়। বান্দারবানে থাকার জন্য এমন কতকগুলি জায়গা হল —
- উপজিলা রেস্ট হাউস (Upazila Rest House)
- হোটেল পাহাড়িকা (Hotel Paharika)
- হোটেল পূরবী (Hotel Purabi)
- হোটেল গ্রীনহিল (Hotel Greenhill)
- হিলসাইট রিসোর্ট (Hillside Resort)
চিম্বুক পাহাড়ে কোথায় খাবেন
চিম্বুক পাহাড়ের পাশে আর্মি পরিচালিত একটি ক্যান্টিন রয়েছে। এই ক্যান্টিনে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে। চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্রের সামনে একটি আদিবাসী খাবার হোটেলও রয়েছে। আগে থেকে জানালে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে দেবে।
চিম্বুক পাহাড় ভ্রমণ করার সময় টিপস
- অনুমতি ছাড়া ছবি, ভিডিও তুলবেন না বা এমন কিছু করবেন না যা স্থানীয় লোকজনকে বিব্রত করে।
- আপনি যখন দলগত ভ্রমণে থাকেন তখন অন্যদের সাহায্য করুন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবকিছু স্বাভাবিক জায়গার মতো মসৃণ নয়। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে একসাথে থাকুন।
- স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে অশোভন আচরণ করবেন না। তারা খুব সহায়ক এবং সহজ সাধারণ প্রকৃতির।
- আপনার বা আপনার ভ্রমণ সঙ্গীদের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
- সোলার সিস্টেম হল চিম্বুকের বিদ্যুতের ব্যবস্থা। তাই পাওয়ার ব্যাঙ্ক সঙ্গে নেওয়াই ভালো।
- চিম্বুকে সব মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না। রবি এবং এয়ারটেল কিছু জায়গায় তুলনামূলকভাবে ভাল কাজ করে।
- যাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই বিজিবি বা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আপনার আইডি কার্ড বা ফটোকপি আপনার সাথে রাখুন।
- জরুরী প্রয়োজনে আপনার সাথে কিছু ফার্স্টএইড মেডিসিন রাখুন।
আরো পড়ুন: Singer কোন দেশের কোম্পানি – Singer কোম্পানির মালিক কে
উপসংহার
পাঠক বন্ধুরা, ধৈর্য সহকারে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য সাধুবাদ জানাচ্ছি। আশাকরি আপনার কাঙ্খিত অনুসন্ধান অনুযায়ী (বাংলার দার্জিলিং বলা হয় কোন পাহাড়কে – Darjeeling of Bangladesh) আমাদের পোস্টের মাধ্যমে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন। আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আমাদের পোস্টটি এখানেই শেষ করছি। আমাদের পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই শেয়ার বাটন এ ক্লিক করে আপনাদের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন। সকলকে ধন্যবাদ।