বৃত্ত কাকে বলে – What is Circle in Bengali : নমস্কার পাঠক বন্ধুরা, গণিতে বিভিন্ন ধরনের অধ্যায় রয়েছে, তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল জ্যামিতি। এটি আকারের আপেক্ষিক কনফিগারেশন এবং তাদের স্থানিক বৈশিষ্ট্যের উপরও দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আমরা জানি যে জ্যামিতি 2D জ্যামিতি এবং 3D জ্যামিতিতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। এটি ভাগ করার আগে, সমস্ত জ্যামিতিক আকারগুলি বিন্দু, রেখা, রশ্মি এবং সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা গঠিত হয়। যখন একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সর্বদা সমান দূরত্ব বজায় রেখে অন্য একটি বিন্দু তার চারদিকে একবার ঘুরে এলে যে ক্ষেত্র তৈরি হয় তাকে বৃত্ত বলে। এই নিবন্ধে, আমরা – বৃত্ত কাকে বলে, উদাহরণ সহ তাদের অর্থ সহ বিভিন্ন ধরনের কোণ কী তা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে গণিতের এমন একটি অধ্যায় রয়েছে যা আমাদের অধ্যয়ন করার সুযোগ দেয় যখন দূরবর্তী রেখাগুলি মিলিত হয় তখন কী ধরণের আকার তৈরি হয় এবং সেই অধ্যয়ন থেকে আমরা বিভিন্ন ধরণের অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হই। এই অধ্যায়ে আমরা আপনাকে বলব — বৃত্ত কাকে বলে? এবং বৃত্ত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে শেষ পর্যন্ত এই নিবন্ধটির সাথে থাকুন।
বৃত্ত কাকে বলে – What is Circle in Bengali
একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমান দূরত্বে অবস্থিত বিন্দুগুলির অবস্থানকে বৃত্ত বলে। এই স্থির বিন্দুকে বৃত্তের কেন্দ্র বলা হয়, কেন্দ্র এবং বৃত্তের পরিধির উপর অবস্থিত যেকোনো বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্বকে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বলে। একটি বৃত্ত হল একটি সাধারণ বন্ধ বক্ররেখা যা সমতলকে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করে: একটি অভ্যন্তরীণ এবং একটি বাইরের।
সমদুরবর্তী বলতে বুঝায় যে সকল বিন্দু একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হতে সমান দুরত্বে বা নির্দিষ্ট দুরত্বে অবস্থিত। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট বিন্দু হতে যেসব বিন্দুর দুরত্ব একটি ধ্রূবক রাশি। নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বলা হয় বৃত্তের কেন্দ্র। আর নির্দিষ্ট দুরত্বকে বলা হয় বৃত্তের ব্যাসার্ধ। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিন্দু বা কেন্দ্র হতে বৃত্তের পরিধির উপর যে কোন একটি বিন্দুর দরত্বকে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বলে। বৃত্তের ব্যাসার্ধর দ্বিগুণকে বৃত্তের ব্যাস বলে।
বৃত্তের সংজ্ঞা – Definition of Circle in Bengali
একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সর্বদা সমান দূরত্ব বজায় রেখে অন্য একটি বিন্দু তার চারদিকে একবার ঘুরে এলে যে ক্ষেত্র তৈরি হয় তাকে বৃত্ত বলে।
অথবা
একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সর্বদা সমান দূরত্ব বজায় রেখে যে বক্ররেখা ঘুরে আসে তাকে বৃত্ত বলে।
বৃত্ত কি – What is circle in Bengali
বৃত্ত হলো একটি সমতলীয় জ্যামিতিক চিত্র যার বিন্দুগুলো কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত।
আরো পড়ুন: কোণ কাকে বলে
বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি
বৃত্তের বিভিন্ন অংশ গুলি সম্পর্কে ধারণা নিম্নে দেওয়া হল —
বৃত্তের কেন্দ্র কাকে বলে
যে বিন্দুকে কেন্দ্র করে একটি বৃত্ত আঁকা হয় তাকে ঐ বৃত্তের কেন্দ্র বলে।
বৃত্তের পরিধি কাকে বলে – Circumference of circle in Bengali
বৃত্তের চারপাশে গঠিত বক্ররেখাকে বৃত্তের পরিধি বলা হয় অথবা একটি বৃত্তের কেন্দ্র হতে সমান দূরত্ব বজায় রেখে কোন বিন্দুর চলার পথকে পরিধি বলে।
বৃত্তের ব্যাসার্ধ কাকে বলে – Radius of circle in Bengali
একটি বৃত্তের পরিধিতে কেন্দ্র ও যেকোনো বিন্দুর মধ্যকার দূরত্বকে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বা কেন্দ্র থেকে বৃত্তের পরিধির দূরত্বকে ‘ব্যাসার্ধ’ বলে।
বৃত্তের জ্যা কাকে বলে – Chord of circle in Bengali
বৃত্তের জ্যা হল একটি সরল রেখা যা বৃত্তের উভয় প্রান্তের পরিধিতে স্পর্শ করে। অথবা বৃত্তের পরিধির যে কোন দুই বিন্দুর সংযোজক রেখাংশকে বৃত্তের জ্যা বলে।
বৃত্তের ব্যাস কাকে বলে – Diameter of circle in Bengali
একটি বৃত্তকে দুটি সমান অংশে বিভক্ত রেখাকে ব্যাস বলে অথবা বৃত্তের কেন্দ্রগামী সকল জ্যাকেই ব্যাস বলে। একটি বৃত্তে অসংখ্য ব্যাস থাকে। এটি বৃত্তের কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে যায় এবং ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ।
বৃত্তের ক্ষেত্র কাকে বলে – Sector of circle in Bengali
বৃত্তের ক্ষেত্র হল এমন একটি অঞ্চল যা যেকোনো দুটি সেক্টর এবং একটি চাপের মধ্যে অবস্থিত।
স্পর্শক কাকে বলে
একটি বৃত্ত ও একটি সরল রেখা যদি একটি ও কেবল একটি ছেদ বিন্দু থাকে তবে রেখাটিকে বৃত্তটির একটি স্পর্শক বলে।
কর্তক কি
একটি বর্ধিত জ্যা, যা দুটি বিন্দুতে বৃত্তকে ছেদ করে এমন একতলীয় সরলরেখা।
বৃত্তের চাপ কাকে বলে – Segment of circle in Bengali
একটি বৃত্ত খণ্ড হল একটি বৃত্তের একটি চাপ এবং তার জ্যা দ্বারা আবদ্ধ অঞ্চল।
বৃত্তের সূত্র সমূহ – Formula of Circle in Bengali
• বৃত্তের পরিধি – 2πr
• বৃত্তের ক্ষেত্রফল – πr²
• এখানে π = 22/7 বা 3.14 এবং r = বৃত্তের ব্যাসার্ধ
অর্ধ বৃত্তের সূত্র সমূহ Formula of Semicircle in Bengali
• অর্ধবৃত্তের পরিধি = 2πr + 2r
• অর্ধবৃত্তের ক্ষেত্রফল = 1/2 X π r²
বৃত্তের চাপের সূত্র
• চাপের দৈর্ঘ্য = θ/360°X 2πr
• ক্ষুদ্র সেক্টরের ক্ষেত্রফল = θ/360°X πr²
• প্রধান সেক্টরের ক্ষেত্রফল = 360° – θ/360°X πr²
বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সূত্র
• ছোট বৃত্তের ক্ষেত্রফল = θ/360°X πr2 – ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল
• দীর্ঘ বৃত্তের ক্ষেত্রফল = πr2 – ছোট বৃত্তের ক্ষেত্রফল
বৃত্তের ইতিহাস
লিখিত ইতিহাস সংরক্ষণ শুরু হওয়ারও আগে থেকে বৃত্ত সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল। প্রাকৃতিক বৃত্তগুলো, যেমন: চাঁদ, সূর্য ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়েছিলো। চাকা, যা মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে, তা বৃত্তাকার। চাকার সাথে সম্পর্কিত আরো কিছু আবিষ্কার, যেমন গিয়ার, চাকি প্রভৃতিও বৃত্তাকার। গণিতে বৃত্তের অধ্যয়ন পরবর্তীকালে জ্যামিতি ও ক্যালকুলাসের মত উচ্চতর শাখাগুলোর উন্নয়নে অবদান রেখেছে । প্রারম্ভিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে জ্যামিতি এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান মধ্যযুগীয় পণ্ডিতদের ঐশ্বরিক জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো এবং অনেকেই বৃত্তকে “ঐশ্বরিক” বা “নির্ভুল” বলে বিশ্বাস করতো।
FAQs
সাধারণ স্পর্শক কাকে বলে
একটি সরলরেখা একাধিক বৃত্তকে স্পর্শ করলে ঐ রেখাকেই সাধারণ স্পর্শক বলে।
অর্ধবৃত্তস্থ কোণ কাকে বলে
বৃত্তের ব্যাসের উপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণকে অর্ধবৃত্তস্থ কোণ বলে।
বৃত্তের কেন্দ্রস্থ কোণ কাকে বলে
একটি কোণের শীর্ষবিন্দু কোন বৃত্তের কেন্দ্রে অবস্থিত হলে কোণটিকে ঐ বৃত্তের কেন্দ্রস্থ কোণ বলে।
বৃত্তস্থ কোণ কাকে বলে
একটি কোণের শীর্ষবিন্দু কোন বৃত্তের পরিধিস্থ একটি বিন্দু হলে এবং কোণটির প্রত্যেক বাহুতে শীর্ষবিন্দু ছাড়াও বৃত্তের একটি বিন্দু থাকলে কোণটিকে একটি বৃত্তস্থ কোণ বলে।
অর্ধবৃত্ত কাকে বলে
বৃত্তের অর্ধেককে অর্ধবৃত্ত বলে। বৃত্তের ব্যাস বৃত্তকে সমান দুই ভাগ করে। এর প্রত্যেক ভাগকে অর্ধবৃত্ত বলে।
উপচাপ কাকে বলে
যে চাপ অর্ধবৃত্ত অপেক্ষা ছোট তাকে উপচাপ বলে।
অধিচাপ কাকে বলে
যে চাপ অর্ধবৃত্ত অপেক্ষা বড় তাকে অধিচাপ বলে।
সমবৃত্ত কাকে বলে
যে সববৃত্তের ব্যাসার্ধ সমান, তাদের সমবৃত্ত বলে।
বৃত্তকলা কাকে বলে
বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ ও একটি চাপ দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে বৃত্তকলা বা বৃত্তীয় ক্ষেত্র বলে।
বৃত্তকলা কয় প্রকার ও কি কি
বৃত্তকলা দুই প্রকার, যথা – মুখ্য বৃত্তকলা ও গৌণ বৃত্তকলা।
বৃত্তাংশ কাকে বলে
বৃত্তের একটি জ্যা ও একটি চাপ দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে বৃত্তাংশ বলে।
বৃত্তাংশ কয় প্রকার ও কি কি
বৃত্তাংশ দুই প্রকার, যথা – মুখ্য বৃত্তাংশ, গৌণ বৃত্তাংশ।
মুখ্য বৃত্তাংশ কাকে বলে
যে বৃত্তাংশ এ কেন্দ্র অবস্থিত, তাকে মুখ্য বৃত্তাংশ বলে, অর্থাৎ অধিচাপ ও জ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ বৃত্তাকার ক্ষেত্রের অংশই হল মুখ্য বৃত্তাংশ।
গৌণ বৃত্তাংশ কাকে বলে
যে বৃত্তাংশ কেন্দ্র অবস্থিত নয়, সেই অংশকে গৌণ বৃত্তাংশ বলে, অর্থাৎ উপচাপ ও জ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ বৃত্তাকার ক্ষেত্রের অংশই হল মুখ্য বৃত্তাংশ।
উপসংহার
পাঠক বন্ধুরা, ধৈর্য সহকারে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য সাধুবাদ জানাচ্ছি। আশাকরি আপনার কাঙ্খিত অনুসন্ধান অনুযায়ী (বৃত্ত কাকে বলে – What is Circle in Bengali) আমাদের পোস্টের মাধ্যমে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন। আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আমাদের পোস্টটি এখানেই শেষ করছি। আমাদের পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই শেয়ার বাটন এ ক্লিক করে আপনাদের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন। সকলকে ধন্যবাদ।